কলকাতা: বিশ্বকাপ ফাইনালে (ODI World Cup) পরাজয়ের পর ভারতের ড্রেসিংরুমে গিয়ে ক্রিকেটারদের সান্ত্বনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণা। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।
প্রধানমন্ত্রীর পেপ টক
ভারতের (Indian Cricket Team) জয় দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মাঠে। যে মাঠের আবার নামকরণও তাঁর নামেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Modi) অবশ্য হতাশই হতে হল রবিবার রাতে। ভিভিআইপি বক্সে বসে দেখতে হল, তাঁর শহর থেকে ট্রফি নিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে। যে ফলাফলের পর গোটা দেশে শোকের আবহ। ভেঙে পড়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও। তবে সকলকে সান্ত্বনা দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার রাতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের পরই ভারতীয় ড্রেসিংরুমে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সান্ত্বনা দেন তিনি। তবে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন মহম্মদ শামিকে বুকে টেনে নেন মোদি। ২৪ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছেন ডানহাতি পেসার। ফাইনালে ব্যর্থতার পর শামিকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করেন প্রধানমন্ত্রী।
দল ঘোষণা ভারতের
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্য়াচ খেলার সময় তিনি গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন। নিজের বলে ফলো থ্রুতে একটি শট আটকাতে গিয়ে গোড়ালিতে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। যার জেরে সেই ম্যাচে আর বল করতে পারেননি। তাঁর ওভার শেষ করেছিলেন বিরাট কোহলি। পরে গোটা বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যান হার্দিক পাণ্ড্য (Hardik Pandya)।
এখনও ফিট হননি হার্দিক। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার (IND vs AUS) বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলেও তাঁকে রাখা হল না। সোমবার যে দল ভারতীয় নির্বাচকেরা বেছে নিলেন, তার অধিনায়ক করা হয়েছে সূর্যকুমার যাদবকে। প্রথম তিন ম্যাচে সহ অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। শেষ দুই ম্যাচে পাওয়া যাবে শ্রেয়স আইয়ারকে। শেষ দুই ম্যাচে সহ অধিনায়কত্বও করবেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলা ক্রিকেটার।
বিশ্বকাপের পনেরো জনের দল থেকে মাত্র তিনজনকে গোটা সিরিজের জন্য দলে রাখা হয়েছে। তাঁরা হলেন সূর্যকুমার, ঈশান কিষাণ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। তাঁদের মধ্যে ঈশান কিষাণ বিশ্বকাপে মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন। প্রসিদ্ধ কোনও ম্যাচই খেলেননি। হার্দিক চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর তাঁর পরিবর্ত হিসাবে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
কাপের ওপর পা!
সতেরো বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) প্রেসিডেন্ট শরদ পওয়ারের সঙ্গে অভব্যতা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক রিকি পন্টিং (Ricky Ponting)। প্রথমে হাতের ইশারায় পওয়ারকে তাড়াতাড়ি ট্রফি দিতে বলা এবং তারপর মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন পন্টিং। পরে যে কারণে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া হয়। ক্ষমা চেয়ে নেন পন্টিংও।
বিশ্বকাপ জেতার পর অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠল আর এক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। তিনি, মিচেল মার্শ (Mitchell Marsh)। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মার্শের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিশ্বকাপের ওপর পা তুলে বসে রয়েছেন মার্শ।
রবিবার ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবার ওয়ান ডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে বিশ্ব জয় করার পর অজ়ি ক্রিকেটারেরা উদ্দাম আনন্দে ভেসে যায়। বিশ্বকাপের শুরুতে পরপর দুই ম্যাচ হারের পর, যে দলটির সেমিফাইনালে ওঠা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, তারাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে এবার।
সেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে মিচেল মার্শ একটি লজ্জার কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন। যার জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর তীব্র সমালোচনা চলছে।
আইসিসি-র বেছে নেওয়া একাদশ
ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক যিনি, সেই ট্র্যাভিস হেড বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা পেলেন না। এমনকী, দ্বাদশ ব্যক্তি হিসাবেও রাখা হয়নি তাঁকে। রানার আপ ভারতীয় দল থেকে ৬ ক্রিকেটারকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে আইসিসি-র বেছে নেওয়া বিশ্বকাপের সেরা একাদশে।
দলের অধিনায়ক করা হয়েছে রোহিত শর্মাকে। যিনি বিশ্বকাপে নতুন আঙ্গিকে ধরা দিয়েছিলেন। পাওয়ার প্লে-তে ঝোড়ো ব্যাটিং করছিলেন। ব্যক্তিগত মাইলফলক, হাফসেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরির পরোয়া না করে। তাঁর নিঃস্বার্থ ব্যাটিং নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রশংসা। ফাইনালে বিধ্বংসী ৪৭ রান করেছিলেন। তবে খারাপ শট খেলে আউট হন। যা নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। যদিও আইসিসি-র সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন হিটম্যান।
কুইন্টন ডি’কক (উইকেটকিপার) – দক্ষিণ আফ্রিকা (৫৯.৪০ গড়ে ৫৯৪ রান)
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক) – ভারত (৫৪.২৭ গড়ে ৫৯৭ রান)
বিরাট কোহলি – ভারত (৯৫.৬২ গড়ে ৭৬৫ রান)
ডারিল মিচেল – নিউজ়িল্যান্ড (৬৯ গড়ে ৫৫২ রান)
কে এল রাহুল – ভারত (৭৫.৩৩ গড়ে ৪৫২ রান)
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল – অস্ট্রেলিয়া (৬৬.৬৬ গড়ে ৪০০ রান ও ৬ উইকেট)
রবীন্দ্র জাডেজা – ভারত (৪০ গড়ে ১২০ রান ও ১৬ উইকেট)
যশপ্রীত বুমরা – ভারত (১৮.৬৫ গড়ে ২০ উইকেট)
দিলশান মধুশঙ্কা – শ্রীলঙ্কা (২৫ গড়ে ২১ উইকেট)
অ্যাডাম জ়াম্পা – অস্ট্রেলিয়া (২২.৩৯ গড়ে ২৩ উইকেট)
মহম্মদ শামি – ভারত (১০.৭০ গড়ে ২৪ উইকেট)
(দ্বাদশ ক্রিকেটার) – জেরাল্ড কোয়েৎজ়ে – দক্ষিণ আফ্রিকা (১৯.৮ গড়ে ২০ উইকেট)
আত্মবিশ্বাসী ইগর
দিন পাঁচেক আগে কুয়েতে গিয়ে কুয়েতকে হারিয়ে এলেও ঘরের মাঠে কাতারের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে মোটেই সহজ হবে না, তা খুব ভাল করেই জানেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ (Igor Stimac)। ফিফা ক্রমতালিকায় ৪১ ধাপ এগিয়ে থাকা কাতার এশিয়ার সেরা ফুটবলখেলিয়ে দেশগুলির অন্যতম। গত বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে তারা তাতে অংশও নেয়। যদিও কোনও ম্যাচেই জিততে পারেনি। সাত গোল খেয়ে মাত্র এক গোল দিতে পেরেছিল।
এশিয়ার ফুটবলের নিরিখে কাতার অবশ্য বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। গতবারের এএফসি এশিয়ান কাপ তাদের হাতেই উঠেছিল। অবশ্য সেই সাফল্যের তিন মাসের মাথায় বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভারত তাদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে তাদেরই ঘরের মাঠে। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও যে ভাল তাও বলা যায় না। এ বছর ১৫টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জিতেছে তারা।
এই অবস্থায় কাতারকে কি আটকানো বা হারানো সম্ভব ভারতের পক্ষে? যারা কয়েকদিন আগেই বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তাদের প্রথম অ্যাওয়ে-উইন নিয়ে দেশে ফিরেছে, তাদের পক্ষে কি কাতারের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে নিদেনপক্ষে আটকানোও সম্ভব নয়?
কী বলছেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ? সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এই ম্যাচে আমাদের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। তাই অল আউট যাওয়াই ভাল। বাইরের বিষয়গুলো তো আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমরা আমাদের পারফরম্যান্সের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারি মাত্র। আমরা শুধু ৯০ মিনিট ধরে নিজেদের সেরাটা দিতে পারি”।
Read More