কলকাতা: রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে (Ration Scam) জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) গ্রেফতারি নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। দুর্নীতি মামলায় আরও এক মন্ত্রীর নাম জড়ানোয় কার্যতই অস্বস্তিতে তৃণমূল। সেই আবহেই নিজের অবস্থান পাল্টালেন দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sovandeb Chattopadhyay)। অসৎ পথে ভাল থাকার উপায় বার করতে যাওয়া অন্যায় বলে দিন কয়েক আগে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার একেবারে অবস্থান পাল্টে ফেললেন তিনি। জানালেন, জ্যোতিপ্রিয়ের পাশেই আছেন তিনি।
রেশন দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও, জ্যোতিপ্রিয় ওরফে ‘বালু’র পাশেই দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “অবশ্যই তিনি সরকারি মন্ত্রী। আপনারা কি জানেন, ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য কী কাজ করেছেন? কোন উপায়ে ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করেছেন? কৃষকদের থেকে ধান কেনার চেষ্টা করেছিলেন। মনে রাখবেন, সেটা সবুজ বিপ্লব।”
মমতার সেই মন্তব্য়ের পরই জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে দাঁড়ালেন শোভনদেব। তাঁর বক্তব্য, “অবশ্যই জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে আছি। এত সহজে কাউকে এই রকম চোর বানিয়ে দেওয়া যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, আমি তারই পুনরাবৃত্তি করছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, পুনরাবৃত্তি করছি তার। যত ক্ষণ পর্যন্ত না অন্যায় করেছেন বলে প্রমাণ হচ্ছে, আমরা কেউ মতামত জানাব না।”
আরও পড়ুন: TMC MLA: ‘TMC-র সব সাংসদ-বিধায়ককে ভেতরে ঢুকিয়ে দিন, কালীঘাটের দুর্গা বুঝে নেবেন’, চ্যালেঞ্জ বিধায়কের
এর আগে, গত ৩১ সেপ্টেম্বর যদিও অন্য কথা শোনা গিয়েছিল শোভনদেবের গলায়। বলতে শোনা গিয়েছিল, “আমি যদি ভাবি, আরও একটু ভাল থাকব। সেই ভাল থাকার যোগ্য়তা নেই আমার, কিন্তু ইচ্ছে আছে। সৎ পথে যদি সেই ইচ্ছেপূরণ না করতে পারি, তা অন্যায়। সৎ পথে যা রোজগার করতে পারব, ঠিক আছে। আমার লেখা বই বিক্রি হয়। কমিশন আসে। সেটা ব্যাঙ্কে যায়, আয়করের কাছে হিসেব চলে যায়। তাই ভয় পাই না কিছুকেই।”
তার পর হঠাৎ করে জ্য়োতিপ্রিয়কে নিয়ে শোভনদেবের এই অবস্থান পরিবর্তনের নেপথ্যে মমতার ওই মন্তব্যই অনুঘটকের কাজ করছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। মমতা যেখানে জ্যোতিপ্রিয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে তাঁর সামনে অন্য উপায় নেই বলে মনে কার হচ্ছে। এ নিয়ে যদিও শোভনদেবকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তাঁর কথায়, “কত্রীর ইচ্ছেয় কর্ম। কত্রী স্বয়ং যেখানে চাল চোরের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বাকিরা বিরোধিতা করবেন কী করে? ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তাই অবস্থান পাল্টাতে হচ্ছে। কারণ পদ বাঁচাতে হবে, মান বাঁচাতে হবে। এঁদের মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই। আমার মনে হয়, মানুষ সব দেখছেন। তাঁরা সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তবে জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে দলের অন্দরেই নানা সুর শোনা যাচ্ছে। বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের দাবি, তিনি যতদিন ক্ষমতায় এসেছেন, সব কিছু পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে। ২০২১ সালের পর থেকে কিছু অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখবেন। তার আগে কী ঘটেছে, তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। জ্যোতিপ্রিয়ের যদি কোথাও পদস্খলন হয়েও থাকে, সেখানে মমতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কারও কোনও ভূমিকা নেই বলে দাবি দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
Read More