কলকাতা: পায়ের চোট থেকে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন। এবার তাঁর ভুল চিকিৎসা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কলকাতার এসএসকএম (SSKM Hospital) হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল মমতার। এদিন তিনি জানিয়েছেন, ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁর ক্ষতস্থানে সেপটিক হয়ে গিয়েছিল।
পায়ে চোট পাওয়ার পর থেকেই একরকম ঘরবন্দি মমতা। যদিও বাড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছিলেন তিনি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠক থেকে পুজোর উদ্বোধনও করেন। বুধবারও ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই ভুল চিকিৎসার জন্য তাঁর পায়ের ক্ষতস্থানে সেপটিক হয়ে গিয়েছিল।
পায়ের আঘাত পেয়ে মমতা রাজ্যে একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল SSKM-এ চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। মমতার মন্তব্যে সেই এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েই এবার প্রশ্ন উঠে গেল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি কিনা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও, তাঁর ভুল চিকিৎসা নিয়ে এই মুহূর্তে কাঠগড়ায় এসএসকেএম হাসপাতাল।
শিল্প আনতে স্পেন সফরে গিয়ে পায়ে আঘাত পান মমতা। দেশে ফিরে সটান এসএসকেএম-এ চিকিৎসা করাতে যান। তার পর ঘরবন্দি অবস্থায় ছিলেন মমতা। মাঝখানে চোট পাওয়া জায়গায় সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে বলেও জানান মমতা। তার পর এ দিন সরাসরি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুললেন। তাঁর বক্তব্য, “হাতে স্যালাইনের চ্যানেল করে যেভাবে স্যালাইন দেওয়া হয়, সেভাবে সাত দিন আমার চ্যানেল করা ছিল। আইভি গিয়েছে। সেই অবস্থায় বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।”
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড রেখে গিয়েছিল বামেরা, জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে বললেন মমতা
এর আগে, এসএসকেএম হাসাপাতালে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হলে, সেই সময়ও এসএসকেম হাসপাতালের দিকে আঙুল তুলেছিলেন মমতা। একডালিয়ার পুজোর উদ্বোধনে দিয়ে “গাফিলতি করে মানুষটাকে মেরে ফেলল” বলে সেই সময় মন্তব্য করেন তিনি। এবার নিজের ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে মমতা যে মন্তব্য করেছেন, তাতে রাজনীতির পারদও চড়তে শুরু করেছে।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এসএসকেএম হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রীর ভুল চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত’। শুভেন্দু সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও লেখেন, ‘এটা হল, রাজ্যের সবথেকে উচ্চমানের সরকারি হাসপাতালকে তোলামূলী চোর-ডাকাতদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানানোর অপচেষ্টার ফল। এই অপদার্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আমলে এখানকার ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা কম করছেন এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের শিকার হয়ে ভুয়ো কাগজপত্র তৈরিতে বেশি মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন’।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালকে কার্যত চোখ বন্ধ করেই বিশ্বাস করেন রাজ্যবাসী। শুধু সাধারণ মানুষ নন, হেভিওয়েট রাজনীতিকদেরও আস্থার জায়গা এসএসকেএম। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ভুল চিকিৎসা হল কী করে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কিছুদিন আগে রোগীভর্তি নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের সংঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন। একসময় মদন নিজে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “এতদিন পিজি নিয়ে অহঙ্কার ছিল আমাদের। ভেঙে গেল। আমার সঙ্গে এটা কেন হল না? এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই। হেন কোনও মেশিন নেই, যা পিজি-তে নেই। আমার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল ওদের। সেটা মনে রাখিনি আমি। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থা হলে, ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে অবশ্য়ই। মানুষের কাছে খারাপ বার্তা যাবে, মানুষ ভয় পাবেন আসতে।” মমতার ভুল চিকিৎসা করার পর এসএসকেএম-এর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত হবে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও।
Read More