কলকাতা: এবার খাস কলকাতার বুকে এসে পড়ল বিজেপি-র অন্তর্দ্বন্দ্ব। মুরলিধর সেন লেনে বিজেপি-র কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভে শামিল হলেন দলের কর্মীরা। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন দলের নেতাদেরই একাংশের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar), দলীয় নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অমিত চক্রবর্তী এবং বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের (Amit Malviya) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালেন দলের কর্মীদের একাংশ। শুধু বিক্ষোভ দেখানোই নয়, দলীয় নেতৃত্বের পোস্টারে এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুষি-জুতোও উড়ে এল। (Kolkata News)
বিরোধী দল হিসেবে উঠে এলেও, বাংলার মাটিতে ক্ষমতাদখলের স্বপ্ন এখনও অধরাই। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই সবরকম চেষ্টা-চরিত্র চালাচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। সেই আবেহ লাগাতার অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ-বিক্ষোভের ছবি উঠে আসায় কার্যতই অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু এবার আর জেলা বা সল্টলেক নয়, খাস কলকাতায়, দলের সদর দফতরের বাইরে উত্তাল হল পরিস্থিতি। দলীয় নেতৃত্বের ছবি-সহ প্ল্যাকার্ড হাতে সেখানে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি কর্মীদের একাংশ।(BJP Workers Protest)
বৃহস্পতিবার বিকেলে এই দৃশ্য ধরা পড়ে মুরলিধর সেন লেনের বাইরে। সুকান্ত, জগন্নাথদের ছবি-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে হাজির হন বিজেপি কর্মীরা। সুকান্ত, অমিতাভের ছবিতে লাল রং দিয়ে ক্রস চিহ্ন আঁকা ছিল। কখনও জুতো উড়ে এল ছবির উপর, কখনও আবার ছবি রাস্তায় ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি ছুড়তে দেখা গেল বিক্ষোভকারীদের। শুধু তাই নয়, দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ছবিও পোড়ানো হয় এদিন।
আরও পড়ুন: Amit Shah: নজরে লোকসভা নির্বাচন, এবার পুজো উদ্বোধনে আসছেন শাহ, সোমবার পা রাখছেন তিলোত্তমায়
শুধু গালভরা কথা, মাঠে কোথাও দেখা মেলে না বলে এমনিতেই অভিযোগ উঠছিল বিজেপি-র অন্দরে। বঙ্গ বিজেপি-তে আদি বনাম নব্যের সংঘাতও নতুন নয়। তার জেরেই এদিন দলের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে বলে খবর মিলেছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডও নজর কেড়েছে, যাতে লেখা ছিল, ‘আদি বনাম নব্য, এই বিজেপি-র খেলা’, ‘দালাল রাজ্য কমিটি’, ‘সুকান্ত মজুমদার, অমিত চক্রবর্তী, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় কাঠের পুতুল দূর হটাও’।
এর আগে, গতকালও একই ছবি দেখা যায় সল্টলেকে। সেখানে বিজেপি-র দফতরের বাইরে ধাক্কাধাক্কি, মারামারির দৃশ্য চোখে পড়ে। এদিন তার রেশ এসে পড়ল খাস কলকাতার বুকে। এদিন ভিড় ছিল রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি, তাই রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।
বিজেপি-র তরফে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করে, কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও, পর পর এই ধরনের ঘটনা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে রাজ্য নেতৃত্বকে। এদিন দলের এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, “অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর, পাথরের একটা মোটা টাকার রয়্যালটি, লাখে নয়, টাকার অঙ্ক কোটিতে, সেটা এখন বিজেপি নেতৃত্ব নিচ্ছেন। তৃণমূলের সঙ্গে সেটিং করে চলছেন।”
এ নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “কোথায় বিক্ষোভ চলছে, কারা বিক্ষোভ করছেন, জানা নেই। বিজেপি-র কার্যালয়ের সামনে হলে কাঙ্খিত নয়। কোথাও হয়ত আলোচনায় ফাঁক থেকে গিয়েছে। বিজেপি শৃঙ্খলাপরায়ণ দল। অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, এটা সত্যিই অস্বস্তিজনক ঘটনা।”
এ নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করে তৃণমূল। দলের সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “শীতকালের আগেই বাংলায় সার্কাস শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় সার্কার ভারতীয় জোকার পার্টি। বিজেপি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হতে হতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ সিপিএম, কংগ্রেসকে শূন্য করেছেন। বিজেপি নিজেদের মধ্যে লড়তে লড়তে নিজেরাই না শূন্য হয়ে যায়।”
Read More