নয়াদিল্লি: নয় নয় করে দু’সপ্তাহ হতে চলেছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের। তার মধ্যেই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজার হাসপাতালে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে কমপক্ষে ৫০০ জনের মৃত্য়ু হয়েছে, মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা এবং শিশু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা (Israel Palestine Conflict)। আর সেই নিয়ে দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইজরায়েলি রকেট হামলাতেই এতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি হামাসের। অন্য দিকে, ইজরায়েলের দাবি, ভুল করে হামাসই ওই হাসপাতালে রকেট ছুড়েছে। (Israel Palestine War)
মঙ্গলবার রাতে তীব্র বিস্ফোরণে কেংপে ওঠে গাজা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আল-আহলি আরব হাসপাতাল। ১৮৮২ সালে নির্মিত ওই হাসপাতালটি গাজার প্রাচীনতম হাসপাতাল। আল-আহলি আরব নামের অর্থ আরবের মানুষের হাসপাতাল। প্রত্যেক বছর ওই হাসপাতালে ৪৫ হাজারের বেশি রোগীর আগমন ঘটে। বয়স্ক মহিলা, আগুনে পোড়া, অপুষ্টিতে ভোগা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয় সেখানে। বিনামূল্যে স্ক্রিনিং করে স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করার পাশাপাশি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ট্রমা থেকে বের করে আনতে মনোবিদও রয়েছেন।
শুধু তাই নয়, শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে মোবাইল ক্লিনিকও রয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতালের। ২০১৪ সালে ইজরায়েল যখন গাজায় হামলা চালায়, সেই সময় প্রত্যেক দিন গড়ে ৪৫ জন আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা হয় সেখানে, যার মধ্যে অর্ধেক রোগীই ছিল শিশু।
তাই ওই হাসপাতালে হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে ‘গণহত্যা’, ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। সৌদি আরব সরাসরি ইজরায়েলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদের দাবি, ‘ইজরায়েলি আক্রমণকারীরা জঘন্য অপরাধ ঘটিয়েছে’। কাতারের তরফে এই পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করা হয়।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলৎস জানিয়েছেন, হাসপাতালের উপর এই হামলার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, “গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণের ছবি দেখে আতঙ্কিত আমি। নিরীহ মানুষজন মারা গিয়েছেন, আহত হয়েছেন। ওঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। এই হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত।” রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন।
প্যালেস্তিনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং পুরুষ, যাঁদের মধ্যে বহুজনকে এখনও পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। হাসপাতাল থেকে সারি সারি দেহ বের করে আনার যে ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তা দেখে শিউড়ে উঠেছেন সকলে।
গাজাকে ফুঁড়ে ফেলতে এর আগে ইজরায়েলের তরফে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিটেমাটি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। গাজার মোট পাঁচটি হাসপাতালকেও হুঁশিয়ারি দেয় ইজরায়েল। হাসপাতাল খালি করে দিতে বলা হয়। তাই এই ঘটনায় ইজরায়েলের দিকে আঙুল উঠতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে কখনও হামলা করা যায় না। কিন্তু গাজায় সেই নিয়ম লঙ্ঘিত হতে দেখা গেল। আইন জানা সত্ত্বেও কেন হাসপাতালগুলি খালি করতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হল, প্রশ্ন উঠছে।
ইজরায়েল জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণ অংশ ছেড়ে যে প্যালেস্তিনীয়রা চলে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যাবেয কিন্তু কোন উপায়ে গাজায় মানবিক সাহায্য় এসে পৌঁছবে, কার মাধ্যমে প্যালেস্তিনীয়দের কাছে পৌঁছবে, সেই নিয়ে বিশদ তথ্য দেওয়া হয়নি। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজায় কোণও ত্রাণ বা সাহায্য পৌঁছতে দেয়নি ইজরায়েলি বাহিনী।
স্বভাবতই উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। কারণ, গত সপ্তাহে গাজার দক্ষিণ অংশের বাসিন্দাদের এলাকা খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ইজরায়েল। কিন্তু তার পরও লাগাতার বোমাবর্ষণ চালিয়ে যায়। যে রাস্তা দেশ ছাড়ার জন্য নিরাপদ বলে ধরা হয়, রকেট ছুড়ে সেই রাস্তাও উড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে।
Read More